আকস্মিক ঝড়ে হাইমচর উপজেলার ধান চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি
হাইমচরে ধান চাষীদের স্বপ্নের স্থলে দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে দাঁড়ালো আকস্মিক ঝড়। যেখানে গত কয়েকদিন পূর্বেও চাষীদের মুখে আনন্দের ছাপ ছিলো, সেখানে আজ দুঃখ ভরা মন নিয়ে চিন্তিত তারা।
বলা হয়ে থাকে, কৃষক যখন হাসে, তখন হাসে বাংলাদেশ। কৃষক বাঁচলে, বাঁচবে দেশ। কৃষক যখন নিজে কাঁদে, তখন কাঁদায় গোটা বাংলাদেশ।
মাঠ জুড়ে ধুলছিল কৃষকের সোনালী স্বপ্ন, কাটবে ধান, ঘরের বধুরা গাইবে গান, মনের সুখে আনন্দচিত্তে ঘরে উঠাবে সোনালী ধান। কিন্তু সেই আনন্দঘন মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় হাওর অঞ্চলে প্রকৃতির তাÐব ও লীলায় সেই স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়েছে আকস্মিক ঝড়। একই সাথে হাইমচরের নয়ানী, ছোট ল²ীপুর, ভিঙ্গুলিয়া, গÐামারা ও চরভাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠে ব্যপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন কৃষকগণ।
আকস্মিক ঝড়ের সাথে উত্তপ্ত বাতাস এসে আধাপাকা সবুজ ধানগুলোকে পুড়িয়ে সাদা করে দিয়েছে। কৃষকরা বলছেন, প্রকৃতির এ বৈরিতা, পূর্বে কখনো তারা দেখেননি। এক ঝড়ে কৃষকদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি গুণতে হবে।
চরভাঙ্গা গ্রামের কৃষক আঃ লতিফ ছৈয়াল জানান, ৯০ শতক জমিতে ধান চাষ করে সুখের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। মাঠের ধান আধাপাকা হয়ে আসছিল। এ ধানে বছরে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করেন তিনি। কিন্তু আকস্মিক ঝড়ের থাবা দিয়েছে কৃষকের মাঠে আধাপাকা হলদে রঙ এখন ধারন করেছে সাদা কালার। এর পূর্বে কখনো এমন পরিস্থিতির শিকার না হওয়ায় কোন উপায় অবলম্বন করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
উত্তর আলগী গ্রামে হাসিম মেলকার একজন কৃষক। তিনিও ধান চাষাবাদ করে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণসহ বাজারজাত করেন। কিন্তু ঝড়ে যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন হয়েছে, তা অপূরণীয়। এবারের ব্যয় নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন এ কৃষক।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ে অনেক ধান গাছ জমিতে নুয়ে পড়েছে। বেশ কিছু জমিতে ধানের থোড় থেকে শীষ বের হচ্ছিল। সেগুলোতে আর ফলন মিলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। আধাপাকা ধানের শীষ হলুদে রঙ থেকে সাদা রঙ ধারণ করেছে। শুধু ধান নয়, সবজি এবং আমেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে হাইমচর উপজেলাব্যাপী।
স্থানীয় কৃষকগণ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে জানান, আকস্মিক ঝড়ে হলুদ থেকে সাদা রঙ হওয়ার কারণ গবেষণা পূর্বক নির্ধারণ করে এর সঠিক দিক-নির্দেশনার মাধ্যমে আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া ও ধান চাষে উৎসাহিত হওয়ার পরামর্শ প্রদান করবেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার দেবব্রত সরকার বলেন, হাইমচরে এবার ধান চাষীদের বাম্পার ফলন হওয়ার কথা থাকলেও আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঠে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো কোনো মাঠের ধান আধাপাকা হয়ে আসছিল, কোনো মাঠে বের হয়েছে থোড়। সব মিলিয়ে কৃষকের স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি সময়ে এসে আকস্মিক ঝড়ের কবলে বিনষ্ট হয়েছে ধানসহ অন্যান্য ফসল। তবে কৃষি অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
Post a Comment