এফসিআই জাকির হোসেন তার কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগ
বৈশ্বিক করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও পরিদর্শকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সে অবস্থায় চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের পরিবার-পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফসিআই) মোঃ জাকির হোসেন কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করে অফিস সময়ে দিব্যি চাঁদপুর শহরে অবস্থান করে যাচ্ছেন। শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের পরিবার-পরিকল্পনা পরিদর্শকের সরকারি চাকুরি করলেও তিনি সর্বদা ম্যাজিস্ট্রেসি ভাব নিয়ে চলাচল করে থাকেন।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে দু’ দফা কঠোর লকডাউন চলাকালে এফসিআই মোঃ জাকির হোসেন তার কর্মস্থলে যায়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অফিস চলাকালীন সময়ে তাকে বেশির ভাগ সময় চাঁদপুর শহরে অবস্থান করতে দেখা গেছে। শুধু লকডাউন সময়ই নয়, এর আগ থেকেই চাকুরি ক্ষেত্রে তার অনিয়ম চোখে পড়েছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের এফসিআই মোঃ জাকির হোসেেেনর অনিয়মের কারনে চাঁদপুর জেলা পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ এ প্রতিবেদককে জানান, তার অনিয়মের ব্যাপারে বেশ ক’বার তাকে শোকজ দেয়া হয়েছে। এমনকি মহামারি করোনাকালীন সময়ও ৩ দফা শোকজ দেয়া হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ এম এ গফুর। তিনি যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন, সেখানে জেলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে কী করার আছে? এফসিআই মোঃ জাকির হোসেন যেহেতু তার অধীনে কর্মরত রয়েছেন। ডাঃ ইলিয়াছ এ প্রতিবেদককে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি দ্রæত সময়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
শাহমাহমুদপুরের এফসিআই মোঃ জাকির হোসেনের সরকারি দায়িত্ব পালনে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এম এ গফুর বলেন, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ এফসিআই মোঃ জাকির হোসেনকে শোকজ দিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে অবগত আছেন। এফসিআই জাকির হোসেন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মাঝে মধ্যে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন ভিজিট করেছি। ওই ভিজিটকালীন সময়ে এফসিআই মোঃ জাকির হোসেনকে কর্মস্থলে পেয়েছেন, তা পরিষ্কার করে বলতে পারেননি। তবে তিনি এটা পরিষ্কার করে বলতে পেরেছেন, অফিস সময়ে এফসিআই মোঃ জাকির হোসেন প্রশাসনিক কাজে আছে বলে স্বীকার করেন। করোনাকালীন এমন স্পর্শকালীন সময়ে তাকে তার কর্মস্থলে থাকা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। শাহমাহমুদপুর পরিবার-পরিকল্পনা পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেনের দায়িত্ব পালনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, সুতরাং; এ বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন বলে এ প্রতিবেদককে তিনি আশ্বস্ত করেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদ ইউনিয়নের মাঠ পর্যায়ে ৭ জন পরিবার-পরিকল্পনা কর্মী রয়েছেন। এফসিআই মোঃ জাকির হোসেনের অধিনে ৭ জন মাঠ পর্যায়ের পরিবার-পরিকল্পনা কর্মীর কাজকে মনিটরিং এবং প্রতি সপ্তাহে তাদের কাজের অগ্রগতিসহ সবকিছু দেখভাল করা হচ্ছে তার কাজ এবং তিনি নিজেও প্রতিদিন তার কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন, এমন বিধিনিয়মও রয়েছে সরকারিভাবে। ওই ইউনিয়নের ৭ জন মাঠ পর্যায়ের পরিবার-পরিকল্পনা কর্মীর মধ্যে ৩ জনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেন চাঁদপুর শহরে অবস্থান করেই মুঠোফোনে তাদের কাজের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- এফসিআই মোঃ জোকির হোসেন চাঁদপুর শহরে থেকেই এদের কাজের মনিটরিং করছেন মুঠোফোনে, যারা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত আছেন। তারা হয়তো পরিদর্শকের ন্যায় নিজেদের বাসা-বাড়িতে অবস্থান করেই তাদের দায়িত্ব পালন করছেন, এমনটিও তো হতে পারে! তবে আশ্বর্য্যরে কথা হলো নামপ্রকাশে অনিশ্চুক শাহমাহমুদ ইউনিয়নের মাঠ পর্যায়ের একজন পরিবার-পরিকল্পনা কর্মী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বললেন, পরিদর্শক সাহেব প্রতিদিনই আসেন। গত ২৬ এপ্রিল সোমবার সকাল ১১টায় তার সাথে দেখা করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। অথচ, ২৬ এপ্রিল সোমবার সকাল ১১টায় এফসিআই মোঃ জাকির হোসেন চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অবস্থান করেছেন। ওইদিন তিনি চাঁদপুর স্টেডিয়ামে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক খাদ্য সহায়তা বিতরণকালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে ফোজ দিচ্ছেন সাংবাদিকদের।
এদিকে ২০২০ সালে মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও শ’ শ’ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ওই করোনাকালীন সময়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন কর্তৃক দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ অসহায়-কর্মহীন মানুষের বাসা-বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন জনদরদী সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান ও চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ জামান। যা চাঁদপুরে তথা সারাদেশের মধ্যে অনন্য কর্মসূচি হিসেবে ভ‚য়সি প্রশংসা অর্জন করে। এ বিশাল দায়িত্বের নেপথ্যে ছিলো একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবক সদস্য। যাদের শ্রম ও ঘামে এ কর্মসূচি সফলতার মুখ দেখতে পায়।
তেমনিভাবে চলতি বছরেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা হিসেবে অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মাঝে পুনরায় মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ জামানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যদের সহযোগিতায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে গত ক’দিন ধরে প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৬শ’ অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আসছে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিক স্বেচ্ছাসেবক টিমে অগণিত কর্মীরা স্বেচ্ছায় এসে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ স্বেচ্ছাসেবক টিমে সাংবাদিক, শিক্ষক, কমিউনিটি পুলিশিং কর্মকর্তা, চাকুরিজীবীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গণের কর্মীরাও রয়েছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেনসহ দু’ একজন সরকারি ইউপি সচিবও রয়েছেন। এক্ষেত্রে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ জামান স্বেচ্ছাসেবক টিমের সকল সদস্যদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, সবার নিজ নিজ কর্মস্থলের কাজ শেষে অবসর সময়ে এসে সহযোগিতা করার জন্য। আগে নিজ কর্মস্থলে কাজ, তারপর স্বেচ্ছাশ্রম। জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত স্বেচ্ছাসেবক টিমের আহŸায়ক ও চাঁদপুর সদর উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক মোঃ ওমর ফারুক এ প্রতিবেদককে জানালেন, এ টিমে হানারচর ইউপি সচিব এমএ কুদ্দুছ রোকনও কাজ করছেন। ইউপি সচিব রোকন তার সরকারি চাকুরির দায়িত্ব শেষ করে এখানে স্বেচ্ছাশ্রমের কাজে যোগ দিচ্ছেন। এফসিআই মোঃ জাকির হোসেন স্বেচ্ছাসেবক টিমে রয়েছেন, তবে সে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেই। স্যারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে- নিজের কর্মস্থলে কাজ আগে, তারপর স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ। ওমর ফারুক আরো বললেন, আমরা কাউকে জোর করে এ টিমে রাখিনি বা কোনো সরকারি দপ্তরের কাউকে জোর করে আনা হয়নি। এখানে সবাই স্বেচ্ছায় এসে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের এফসিআই মোঃ জাকির হোসেন ইদানিং তার কর্মস্থলে আওয়ামী লীগের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। যে কথাটি খোদ চাঁদপুর জেলা পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগেরে উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছও স্বীকার করেছেন। এমনকি, চাঁদপুরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সাহিত্য অঙ্গণেও তার প্রভাব রয়েছে বলে তার অফিসিয়াল কর্মকর্তা স্বীকার করলেন। এভাবেই সরকারি চাকুরির কর্মস্থলে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থেকে চাঁদপুরে বসে মুঠোফোনে কর্মস্থল নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন এফসিআই মোঃ জাকির হোসেন।
Post a Comment